সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার ) প্রতিনিধি,
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে ডাক্তারের ছড়াছড়ি। এদের কে আসল আর কে নকল তা চেনা দূরহ হয়ে পড়েছে সাধারণ রোগীদের। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঈদগাঁওতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কথিত ডাক্তারের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তাদের কেউ ১ মিনিটের মধ্যেই দাঁত, কান, পেট ব্যাথা এবং হাঁপানি রোগ সুস্থ করার চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। কেউবা মরণব্যাধি ক্যান্সার, বিকল কিডনিসহ নানা জটিল রোগ চিকিৎসায় সারিয়ে তোলার গ্যারান্টি দিচ্ছেন। আবার কেউ নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে প্রেসক্রিপশন ও ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ডাক্তার লিখছেন। অনেকে সাধারণ অসুখেও দিচ্ছেন নানা পরীক্ষা আর অপ্রয়োজনীয় ওষুধ।
অভিযোগ উঠেছে, ঈদগাঁওতে বিএমডিসির সুষ্ঠু মনিটরিং ও সুপারভিশনসহ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সাধারণ মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ থাকলেও বিএমডিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করছেন। জানা গেছে, মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ নং আইন মোতাবেক নূন্যতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রী প্রাপ্তগণ ব্যতীত অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবে না। তবে এমবিবিএস বা বিডিএস পাশ না করেও অনেকে নামের আগে ডাক্তার শব্দটি জুড়ে পেশাকে কলুষিত করছেন। সারাদেশে অসংখ্য মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। তবে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বিএমডিসির। এছাড়া সাধারণ মানুষকে অপচিকিৎসা থেকে রক্ষায় চিকিৎসক নেতাদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাধারণ রোগীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের প্রচলিত আইনে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস পাস করা চিকিৎসকদের স্বীকৃতি প্রদানকারি একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। তবে কক্সবাজারে বিএমডিসির আদলে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। যারা ভুয়া ডাক্তার তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইন শৃংখলা বাহিনী, বিএমএ এমনকি গণমাধ্যমকর্মীদের শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত মনে করেন সচেতন মহল ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ঈদগাঁওর পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে পানি পড়া, ডাব পড়া’র মতো অপচিকিৎসা প্রবলভাবে ঝেঁকে বসেছে। শুধু কথিত ডাক্তাররাই নন, খ্যাতনামা ডাক্তাররাও (বিএমডিসির স্বীকৃতি নয়) এমন ডিগ্রি ব্যবহার করে মানুষকে অহরহ প্রতারিত করছেন। আবার দেশে এক দুই সপ্তাহের সেমিনারে যোগ দিয়ে যে সার্টিফিকেট পাচ্ছেন সেটা প্রেসক্রিপশন ও ভিজিটিং কার্ডে জুড়ে দিচ্ছেন। ফলে ডিগ্রি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় সাধারণ রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গ্র্যাজুয়েট ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারে না। কিন্তু অনেকে তিন থেকে ছয়মাসের ট্রেনিং নিয়ে নামের আগে ডাক্তার লিখছে। ফলে অসংখ্য মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া বলেন, বিএমডিসি অভিযোগ না পেলে কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। সেক্ষেত্রে তিনি রোগীদের সচেতন হয়ে অপচিকিৎসকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ করার আহ্বান জানান ।
পাঠকের মতামত: